১২:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘোড়ার মাংস খাওয়া যাবে কি?

নাগরিক বার্তা ডেস্ক

বর্তমানে ঘোড়ার সংখ্যা ক্রমশ কমছে, এবং এটি মানুষের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে কয়েক শতাব্দী আগে ঘোড়া ছিল যুদ্ধ ও ভ্রমণের অপরিহার্য সঙ্গী। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা ঘোড়ায় চড়েছেন এবং যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করেছেন। শক্তিশালী ও দ্রুতগামী ঘোড়া যুদ্ধের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারত।

প্রাথমিকভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের ঘোড়ার মাংস খেতে নিষেধ করেছিলেন, কারণ ঘোড়া ছিল জিহাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাহন। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, ২/৫৩১; সুনানে নাসায়ি, ৮/২০৬)

পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোড়ার মাংস খাওয়ার অনুমতি দেন। জাবের (রা.) বলেন, ‘খায়বারের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) গাধার মাংস খেতে নিষেধ করেছেন, তবে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৫২০)

ইসলামে ঘোড়ার মাংসের বিধান
বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মাদ সাইফুল কাবির বলেন, ‘আল্লাহ মানুষের জন্য হালাল ও হারাম খাদ্যের তালিকা সুস্পষ্ট করেছেন। গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হালাল। কেউ ঘোড়ার মাংস খেতে পছন্দ না করলে সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। শরিয়ত এতে বাধ্য করে না।’ ফিকহের কিতাবসমূহে ঘোড়ার মাংস খাওয়া হালাল বলা হয়েছে, তবে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ সম্পূর্ণ হালাল বলেছেন, আবার কেউ বলেছেন, এটি অপছন্দনীয় হলেও খাওয়া যাবে।

সাহাবিরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় ঘোড়ার মাংস খেয়েছেন। আসমা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে ঘোড়া জবাই করে খেয়েছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৫১৯)

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ঘোড়ার মাংস খাওয়া মাকরুহ বলেছেন। তাঁর ব্যাখ্যায় আছে, যদি ঘোড়ার মাংস গণহারে খাওয়া হয়, তবে জিহাদের জন্য ঘোড়ার সংকট দেখা দিতে পারে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, ৫-২৯০)

খতিব মুহাম্মাদ সাইফুল কাবির বলেন, ‘ঘোড়ার মাংস হালাল। এটিকে হারাম বলার সুযোগ নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নিষেধ করেছিলেন, তখন ঘোড়া ছিল যুদ্ধের প্রধান বাহন। কিন্তু পরে তিনি অনুমতি দিয়েছেন। সুতরাং ঘোড়ার মাংস খাওয়া বৈধ।’

যেসব প্রাণী খাওয়া নিষিদ্ধ বা হারাম
প্রাণী প্রধানত দুই ধরনের: স্থলজ ও জলজ। মাছ ছাড়া অন্যান্য জলজ প্রাণী খাওয়া হারাম।

স্থলজ প্রাণী তিন প্রকার:
১. যেগুলোর কোনো রক্ত নেই (যেমন: মশা, মাছি, মাকড়সা, পিঁপড়া, টিড্ডি)। টিড্ডি ছাড়া বাকিগুলো খাওয়া হারাম।
২. যেগুলোর প্রবাহিত রক্ত নেই (যেমন: সাপ, ইঁদুর)। এগুলো খাওয়া হারাম।
৩. যেগুলোর প্রবাহিত রক্ত আছে। এগুলো আবার দুই প্রকার:

থাবা ও নখরবিশিষ্ট পাখি (যেমন: চিল, শকুন, বাজ, ঈগল) খাওয়া নিষেধ।

ঠোঁট দিয়ে খাওয়া পাখি হালাল। তবে যদি তা নাপাকি খায়, তবে খাওয়া মাকরুহ।

হিংস্র চতুষ্পদ প্রাণী (যেমন: সিংহ, বাঘ, কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, হাতি, বানর) খাওয়া হারাম।

অহিংস্র ও সম্পূর্ণ পবিত্র প্রাণী (যেমন: গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা, হরিণ, খরগোশ) খাওয়া হালাল।

নাপাক প্রাণী (যেমন: শূকর) খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম।

সব ধরনের ঘোড়া ও গৃহপালিত গাধার মাংস খাওয়া মাকরুহ। তবে খাদ্যের সংকট বা চিকিৎসার প্রয়োজনে হারাম প্রাণীও খাওয়া ও ব্যবহার করা যেতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপডেট সময় : ০৭:৪৩:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
১৯ বার পড়া হয়েছে

ঘোড়ার মাংস খাওয়া যাবে কি?

আপডেট সময় : ০৭:৪৩:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

বর্তমানে ঘোড়ার সংখ্যা ক্রমশ কমছে, এবং এটি মানুষের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে কয়েক শতাব্দী আগে ঘোড়া ছিল যুদ্ধ ও ভ্রমণের অপরিহার্য সঙ্গী। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা ঘোড়ায় চড়েছেন এবং যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করেছেন। শক্তিশালী ও দ্রুতগামী ঘোড়া যুদ্ধের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারত।

প্রাথমিকভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের ঘোড়ার মাংস খেতে নিষেধ করেছিলেন, কারণ ঘোড়া ছিল জিহাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাহন। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, ২/৫৩১; সুনানে নাসায়ি, ৮/২০৬)

পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোড়ার মাংস খাওয়ার অনুমতি দেন। জাবের (রা.) বলেন, ‘খায়বারের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) গাধার মাংস খেতে নিষেধ করেছেন, তবে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৫২০)

ইসলামে ঘোড়ার মাংসের বিধান
বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মাদ সাইফুল কাবির বলেন, ‘আল্লাহ মানুষের জন্য হালাল ও হারাম খাদ্যের তালিকা সুস্পষ্ট করেছেন। গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হালাল। কেউ ঘোড়ার মাংস খেতে পছন্দ না করলে সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। শরিয়ত এতে বাধ্য করে না।’ ফিকহের কিতাবসমূহে ঘোড়ার মাংস খাওয়া হালাল বলা হয়েছে, তবে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ সম্পূর্ণ হালাল বলেছেন, আবার কেউ বলেছেন, এটি অপছন্দনীয় হলেও খাওয়া যাবে।

সাহাবিরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় ঘোড়ার মাংস খেয়েছেন। আসমা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে ঘোড়া জবাই করে খেয়েছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৫১৯)

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ঘোড়ার মাংস খাওয়া মাকরুহ বলেছেন। তাঁর ব্যাখ্যায় আছে, যদি ঘোড়ার মাংস গণহারে খাওয়া হয়, তবে জিহাদের জন্য ঘোড়ার সংকট দেখা দিতে পারে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, ৫-২৯০)

খতিব মুহাম্মাদ সাইফুল কাবির বলেন, ‘ঘোড়ার মাংস হালাল। এটিকে হারাম বলার সুযোগ নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নিষেধ করেছিলেন, তখন ঘোড়া ছিল যুদ্ধের প্রধান বাহন। কিন্তু পরে তিনি অনুমতি দিয়েছেন। সুতরাং ঘোড়ার মাংস খাওয়া বৈধ।’

যেসব প্রাণী খাওয়া নিষিদ্ধ বা হারাম
প্রাণী প্রধানত দুই ধরনের: স্থলজ ও জলজ। মাছ ছাড়া অন্যান্য জলজ প্রাণী খাওয়া হারাম।

স্থলজ প্রাণী তিন প্রকার:
১. যেগুলোর কোনো রক্ত নেই (যেমন: মশা, মাছি, মাকড়সা, পিঁপড়া, টিড্ডি)। টিড্ডি ছাড়া বাকিগুলো খাওয়া হারাম।
২. যেগুলোর প্রবাহিত রক্ত নেই (যেমন: সাপ, ইঁদুর)। এগুলো খাওয়া হারাম।
৩. যেগুলোর প্রবাহিত রক্ত আছে। এগুলো আবার দুই প্রকার:

থাবা ও নখরবিশিষ্ট পাখি (যেমন: চিল, শকুন, বাজ, ঈগল) খাওয়া নিষেধ।

ঠোঁট দিয়ে খাওয়া পাখি হালাল। তবে যদি তা নাপাকি খায়, তবে খাওয়া মাকরুহ।

হিংস্র চতুষ্পদ প্রাণী (যেমন: সিংহ, বাঘ, কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, হাতি, বানর) খাওয়া হারাম।

অহিংস্র ও সম্পূর্ণ পবিত্র প্রাণী (যেমন: গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা, হরিণ, খরগোশ) খাওয়া হালাল।

নাপাক প্রাণী (যেমন: শূকর) খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম।

সব ধরনের ঘোড়া ও গৃহপালিত গাধার মাংস খাওয়া মাকরুহ। তবে খাদ্যের সংকট বা চিকিৎসার প্রয়োজনে হারাম প্রাণীও খাওয়া ও ব্যবহার করা যেতে পারে।