হাদিসে বর্ণিত চিকিৎসা গুণ সম্পন্ন খাদ্য
সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ মানুষকে খাবার দিয়েছেন, যাতে তারা সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারে। ইসলাম খাবার গ্রহণের আদব ও বিধান নির্ধারণ করেছে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত শিক্ষা দিয়েছেন। আসুন, এবার দেখি নবীজি (সা.) যেসব খাবার ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করতেন।
জমজমের পানি
জমজমের পানি পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও বরকতময় পানি। নবীজি (সা.) বলেছেন, “পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পানি হলো জমজমের পানি। এতে রয়েছে তৃপ্তিদায়ক খাদ্য ও রোগের আরোগ্য।” (আল-মুজামুল আওসাত : ৩৯১২)
আল্লাহ জমজমের পানিকে এত বরকত দিয়েছেন যে, যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে উপকার লাভের উদ্দেশ্যে পান করে, তবে আল্লাহ তার আশা পূরণ করেন। হজরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, “জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয়, তা অর্জিত হয়।” (ইবনে মাজাহ : ৩০৬২)
জাইতুন তেল
জাইতুন তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রাসুল (সা.) নিজেও এটি ব্যবহার করতেন এবং সাহাবাদেরও তা ব্যবহারের উপদেশ দিতেন। হজরত ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তোমরা জাইতুনের তেল খাও এবং তা শরীরে মালিশ করো। কেননা এটি বরকতময় ও প্রাচুর্যময় গাছের তেল।” (তিরমিজি : ১৮৫১)
পবিত্র কোরআনের সুরা ত্বিনের প্রথম আয়াতে আল্লাহ জাইতুনের কসম করেছেন এবং সুরা নূরের ২৪ নম্বর আয়াতে একে বরকতময় গাছ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মধু
আল্লাহ মধুর মধ্যে বিভিন্ন রোগের নিরাময় রেখেছেন। কোরআনে বলা হয়েছে,
“তার (মৌমাছির) পেট থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (সুরা নাহল : ৬৮-৬৯)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টি ও মধু খুব ভালোবাসতেন।” (বুখারি : ৫২৭০)
একবার এক সাহাবি তার ভাইয়ের পেটের সমস্যার কথা রাসুল (সা.)-কে জানালে তিনি মধু খাওয়ার পরামর্শ দেন। সাহাবি তার ভাইকে মধু খাওয়ালে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। (বুখারি : ৫৩৬০)
আজওয়া খেজুর
আজওয়া খেজুরকে জান্নাতের ফল বলা হয়েছে এবং এটি অত্যন্ত উপকারী। রাসুল (সা.) বলেছেন,
রাসুল (সা.) এক সাহাবিকে হৃদরোগের চিকিৎসা হিসেবে আজওয়া খেজুর ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। হজরত সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। তিনি তাঁর হাত আমার বুকে রাখেন এবং বলেন,
“তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত। সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটি খেজুর বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য ওষুধ তৈরি করে দেয়।” (আবু দাউদ : ৩৮৩৫)
এগুলো রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহভিত্তিক ওষধি খাবার, যা শুধু চিকিৎসার জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
কালোজিরা
কালোজিরা হলো ছোট কালো বর্ণের দানা, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর গুণাগুণ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন,
“কালোজিরায় সব ধরনের রোগের নিরাময় রয়েছে, তবে আসসাম (অর্থাৎ মৃত্যু) ছাড়া।” (মুসলিম : ৫৬৫৯)
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহভিত্তিক খাদ্য, যা রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।