রোজা ধৈর্যশীলতা যেভাবে গড়ে তোলে
রোজা ধৈর্যশীলতা যেভাবে গড়ে তোলে
রোজা এমন এক ইবাদত, যেখানে কোনো লৌকিকতা নেই, লোক দেখানোর সুযোগও নেই। এটি ধৈর্যশীলদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। মুমিন বান্দা সারাদিন উপবাস থাকে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহর ভয়েই সে পানাহার থেকে বিরত থাকে, যদিও গোপনে তা করতে বাধা দেওয়ার মতো কোনো মানবীয় শক্তি নেই। তীব্র পিপাসার মধ্যেও ওজুর সময় পানি মুখে নিয়ে গিলে না, ইফতারের সময় হওয়ার আগে খাদ্যের ঘ্রাণও নিতে চায় না—কেবল আল্লাহর ভয়ে, আল্লাহর ভালোবাসায়।
নির্জন জায়গায় কেউ না দেখলেও আল্লাহ দেখছেন, কেউ না জানলেও আল্লাহ জানেন। একজন স্বাধীন মানুষ রোজার মাধ্যমে নিজের প্রবৃত্তিকে সংযত করে, খাবার ও শারীরিক চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা তার নৈতিকতা ও তাকওয়ার পরিচায়ক। এই আত্মসংযম ও ধৈর্যশীলতা রোজাদারকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদান করে, যা অন্য কোনো ইবাদতে এভাবে দেখা যায় না।
ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রমজান ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত।’ (বায়হাকি)
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে—
“তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।” (সুরা বাকারা: ১৫৪)
ধৈর্যের অভাবে মানুষ অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যায় পড়ে এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণ হারায়। এজন্য নবী করিম (সা.) সতর্ক করে বলেছেন—
‘রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ। যখন তোমাদের কেউ রোজা থাকে, সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে এবং মূর্খের মতো কাজ না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা ঝগড়ায় জড়ায়, তাহলে সে যেন বলে—আমি রোজাদার, আমি রোজাদার।’ (বুখারি: ১৯০৪; মুসলিম: ১১৫১)
ধৈর্যশীলদের জন্য বিশেষ প্রতিদান
ধৈর্যধারণ উত্তম চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ নিজেকে পরম সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন—
“আল্লাহ তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল।” (সুরা হজ: ৫৯)
অন্যত্র তিনি বলেছেন—
“আমি তো তাকে পেলাম ধৈর্যশীল। কত উত্তম বান্দা সে! সে ছিল আমার অভিমুখী।” (সুরা ছোয়াদ: ৪৪)
ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ আরও বলেন—
“মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।” (সুরা আসর: ১-৩)
ধৈর্যশীলদের জন্য আল্লাহর বিশেষ সান্নিধ্য
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো, সুসম্পর্ক বজায় রাখো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।” (সুরা আলে ইমরান: ২০০)
তিনি আরও বলেন—
“হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।” (সুরা বাকারা: ১৫৩)
ধৈর্যের চর্চা রমজানের অন্যতম শিক্ষা
রমজান আমাদের ধৈর্যশীলতা ও আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। তাই আসুন, রোজার মাধ্যমে আমরা ধৈর্যশীলতা অর্জন করি। অন্যের প্রতি রাগান্বিত না হই, পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে সহনশীলতা বজায় রাখি, এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে ভূমিকা রাখি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোজার শিক্ষা সঠিকভাবে অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।