০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান

নাগরিক বার্তা ডেস্ক

ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের সব মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। বিচারিক আদালতে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, ফলে দেশে ফেরার আইনি বাধাও কেটে গেছে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—তারেক রহমান কেন এখনো দেশে ফিরছেন না?

তার ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত, বিশেষ করে ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ফেরার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না।

আইনি বাধা নেই, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা চিন্তার বিষয়
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলায় খালাস পাওয়ার পর এখন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। বিএনপিপন্থি আইনজীবী বোরহান উদ্দিনের মতে, দেশে ফিরে রাজনীতি করতে তার জন্য আর কোনো আইনি বাধা নেই।

এক-এগারোর সময় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮৪-৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যার মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, অবৈধ সম্পত্তির মামলা, মানি লন্ডারিং মামলা এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল। আপিল বিভাগের রায়ে সব মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন।

২০০৮ সালে উচ্চ আদালতের জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তারেক রহমান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফেরার সম্ভাবনা
তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমিন জানিয়েছেন, বিএনপির শীর্ষ এই নেতা শুধু নিজের স্বার্থ দেখছেন না, বরং দলের সব নেতাকর্মীর বিষয়টি বিবেচনা করছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে, যা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপির লন্ডন ও ঢাকার দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে তারেক রহমান দেশে ফিরতে চান। তবে এখনো তিনি রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে পুরোপুরি অনুকূল মনে করছেন না। নির্বাচনকালীন সময়ে আবারও এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে তার আশঙ্কা রয়েছে।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেছেন, তারেক রহমানের ফেরার সময় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর কিছুদিনের মধ্যে তিনি ফিরতে পারেন।

ঈদের পর দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের তুলনায় ভালো হলেও চিকিৎসকদের মতে, তিনি শতভাগ সুস্থ নন। পরিবারের অনুরোধে লন্ডনে অবস্থান করলেও তিনি দেশে ফিরতে চান।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া ঈদের পর, এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন। তবে ফ্লাইট সমস্যার কারণে কিছুদিন এদিক-সেদিক হতে পারে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দেশে ফিরে খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকবেন এবং ভার্চুয়ালি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন।

তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া একসঙ্গে ফিরবেন না
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেও তারেক রহমানের সঙ্গে একসঙ্গে ফেরার সম্ভাবনা নেই। তারেক রহমানের দেশে ফেরা পুরোপুরি রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।

রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিরাপদ কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, দেশে ফিরলে গ্রেফতারের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই তারেক রহমান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপডেট সময় : ০৭:৪৯:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
৫৫ বার পড়া হয়েছে

ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান

আপডেট সময় : ০৭:৪৯:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের সব মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। বিচারিক আদালতে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, ফলে দেশে ফেরার আইনি বাধাও কেটে গেছে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—তারেক রহমান কেন এখনো দেশে ফিরছেন না?

তার ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত, বিশেষ করে ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ফেরার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না।

আইনি বাধা নেই, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা চিন্তার বিষয়
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলায় খালাস পাওয়ার পর এখন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। বিএনপিপন্থি আইনজীবী বোরহান উদ্দিনের মতে, দেশে ফিরে রাজনীতি করতে তার জন্য আর কোনো আইনি বাধা নেই।

এক-এগারোর সময় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮৪-৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যার মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, অবৈধ সম্পত্তির মামলা, মানি লন্ডারিং মামলা এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল। আপিল বিভাগের রায়ে সব মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন।

২০০৮ সালে উচ্চ আদালতের জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তারেক রহমান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফেরার সম্ভাবনা
তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমিন জানিয়েছেন, বিএনপির শীর্ষ এই নেতা শুধু নিজের স্বার্থ দেখছেন না, বরং দলের সব নেতাকর্মীর বিষয়টি বিবেচনা করছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে, যা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপির লন্ডন ও ঢাকার দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে তারেক রহমান দেশে ফিরতে চান। তবে এখনো তিনি রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে পুরোপুরি অনুকূল মনে করছেন না। নির্বাচনকালীন সময়ে আবারও এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে তার আশঙ্কা রয়েছে।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেছেন, তারেক রহমানের ফেরার সময় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর কিছুদিনের মধ্যে তিনি ফিরতে পারেন।

ঈদের পর দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের তুলনায় ভালো হলেও চিকিৎসকদের মতে, তিনি শতভাগ সুস্থ নন। পরিবারের অনুরোধে লন্ডনে অবস্থান করলেও তিনি দেশে ফিরতে চান।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া ঈদের পর, এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন। তবে ফ্লাইট সমস্যার কারণে কিছুদিন এদিক-সেদিক হতে পারে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দেশে ফিরে খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকবেন এবং ভার্চুয়ালি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন।

তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া একসঙ্গে ফিরবেন না
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেও তারেক রহমানের সঙ্গে একসঙ্গে ফেরার সম্ভাবনা নেই। তারেক রহমানের দেশে ফেরা পুরোপুরি রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।

রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিরাপদ কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, দেশে ফিরলে গ্রেফতারের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই তারেক রহমান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।