০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য

নাগরিক বার্তা অনলাইন
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য

প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। জাতিসংঘের উদ্যোগে এই দিনটি নারীদের অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নের গুরুত্ব তুলে ধরতে উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে, নারী দিবসের যাত্রা শুরু হয়েছিল শ্রমজীবী নারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। চলুন, এই দিবসের পেছনের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিই।

নারী দিবসের সূচনা
নারী দিবসের ধারণাটি মূলত শ্রমিক আন্দোলন থেকে এসেছে। কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে নারী শ্রমিকরা রাজপথে নেমেছিলেন। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রচলন শুরু হয় এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটিকে স্বীকৃতি দেয়।

গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা
১৭৭৬: অ্যাবিগেল স্মিথ অ্যাডামস যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার সময় নারীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসকে।

১৭৯২: ইংরেজ লেখক মেরি ওলস্টোনক্র্যাফ্ট তাঁর বই A Vindication of the Rights of Women-এ নারীর শিক্ষাগত ও সামাজিক সমতার পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন।
১৮৫৭: নিউইয়র্কে নারী টেক্সটাইল শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্য ও প্রতিকূল কর্মপরিবেশের বিরুদ্ধে প্রথম ধর্মঘট পালন করেন।

১৯০৮: নিউইয়র্কে প্রায় ১৫ হাজার নারী শ্রমিক বিক্ষোভে অংশ নেন, যেখানে তারা শিশুশ্রম নিষিদ্ধকরণ, কর্মঘণ্টা হ্রাস, বেতন বৃদ্ধি এবং ভোটাধিকারের দাবি জানান।

১৯১০: কোপেনহেগেনে ক্লারা জেটকিন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। ১৭টি দেশের ১০০ জন নারী তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি দেন।

১৯১৭: রাশিয়ার নারীরা ‘রুটি ও শান্তি’র দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, যা শেষ পর্যন্ত জার শাসনের পতন ঘটায় এবং নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে। রাশিয়ান জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে আন্দোলনটি ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হলেও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এটি ৮ মার্চ হওয়ায়, এই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
নারী দিবসের প্রতীক ও উদযাপন

বেগুনি রঙ: ন্যায়বিচার ও মর্যাদার প্রতীক।
সবুজ রঙ: আশা ও সম্ভাবনাকে বোঝায়।
সাদা রঙ: পবিত্রতার প্রতীক, যদিও এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
১৯০৮ সালে যুক্তরাজ্যের Women’s Social and Political Union (WSPU) সংগঠন প্রথমবারের মতো এই রঙগুলোকে নারীবাদী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে।

নারী দিবস উদযাপন বিশ্বজুড়ে
রাশিয়া: ৮ মার্চ সরকারি ছুটি এবং ফুল বিক্রির পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।
চীন: সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নারীদের জন্য অর্ধদিবস ছুটি দেওয়া হয়।

ইতালি: ‘La Festa Della Donna’ নামে পরিচিত, যেখানে নারীদের লজ্জাবতী ফুল (Mimosa) উপহার দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র: পুরো মার্চ মাসকে ‘নারী ইতিহাস মাস’ হিসেবে পালন করা হয় এবং প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে নারীদের অর্জন সম্মান জানিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়।

নারী দিবস কেবল একটি উদযাপন নয়, এটি নারীদের অধিকার, সমান সুযোগ এবং মর্যাদা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতির প্রতীক। শ্রমিক আন্দোলন থেকে শুরু করে আজকের বিশ্বব্যাপী উদযাপিত এই দিবসটি নারীর ক্ষমতায়নের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপডেট সময় : ০৪:৩৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
৮৬ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য

আপডেট সময় : ০৪:৩৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য

প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। জাতিসংঘের উদ্যোগে এই দিনটি নারীদের অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নের গুরুত্ব তুলে ধরতে উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে, নারী দিবসের যাত্রা শুরু হয়েছিল শ্রমজীবী নারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। চলুন, এই দিবসের পেছনের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিই।

নারী দিবসের সূচনা
নারী দিবসের ধারণাটি মূলত শ্রমিক আন্দোলন থেকে এসেছে। কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে নারী শ্রমিকরা রাজপথে নেমেছিলেন। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রচলন শুরু হয় এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটিকে স্বীকৃতি দেয়।

গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা
১৭৭৬: অ্যাবিগেল স্মিথ অ্যাডামস যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার সময় নারীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসকে।

১৭৯২: ইংরেজ লেখক মেরি ওলস্টোনক্র্যাফ্ট তাঁর বই A Vindication of the Rights of Women-এ নারীর শিক্ষাগত ও সামাজিক সমতার পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন।
১৮৫৭: নিউইয়র্কে নারী টেক্সটাইল শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্য ও প্রতিকূল কর্মপরিবেশের বিরুদ্ধে প্রথম ধর্মঘট পালন করেন।

১৯০৮: নিউইয়র্কে প্রায় ১৫ হাজার নারী শ্রমিক বিক্ষোভে অংশ নেন, যেখানে তারা শিশুশ্রম নিষিদ্ধকরণ, কর্মঘণ্টা হ্রাস, বেতন বৃদ্ধি এবং ভোটাধিকারের দাবি জানান।

১৯১০: কোপেনহেগেনে ক্লারা জেটকিন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। ১৭টি দেশের ১০০ জন নারী তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি দেন।

১৯১৭: রাশিয়ার নারীরা ‘রুটি ও শান্তি’র দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, যা শেষ পর্যন্ত জার শাসনের পতন ঘটায় এবং নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে। রাশিয়ান জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে আন্দোলনটি ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হলেও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এটি ৮ মার্চ হওয়ায়, এই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
নারী দিবসের প্রতীক ও উদযাপন

বেগুনি রঙ: ন্যায়বিচার ও মর্যাদার প্রতীক।
সবুজ রঙ: আশা ও সম্ভাবনাকে বোঝায়।
সাদা রঙ: পবিত্রতার প্রতীক, যদিও এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
১৯০৮ সালে যুক্তরাজ্যের Women’s Social and Political Union (WSPU) সংগঠন প্রথমবারের মতো এই রঙগুলোকে নারীবাদী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে।

নারী দিবস উদযাপন বিশ্বজুড়ে
রাশিয়া: ৮ মার্চ সরকারি ছুটি এবং ফুল বিক্রির পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।
চীন: সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নারীদের জন্য অর্ধদিবস ছুটি দেওয়া হয়।

ইতালি: ‘La Festa Della Donna’ নামে পরিচিত, যেখানে নারীদের লজ্জাবতী ফুল (Mimosa) উপহার দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র: পুরো মার্চ মাসকে ‘নারী ইতিহাস মাস’ হিসেবে পালন করা হয় এবং প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে নারীদের অর্জন সম্মান জানিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়।

নারী দিবস কেবল একটি উদযাপন নয়, এটি নারীদের অধিকার, সমান সুযোগ এবং মর্যাদা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতির প্রতীক। শ্রমিক আন্দোলন থেকে শুরু করে আজকের বিশ্বব্যাপী উদযাপিত এই দিবসটি নারীর ক্ষমতায়নের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।